সাধারণ জ্ঞানের বিতর্কিত প্রশ্ন
প্রশ্ন-১: চিকিৎসাবিদ্যার জনক কে?
ক) ইমহোটেপ
খ) হিপ্পোক্রেটস
গ) চরক
ঘ) কোনোটিই নয়।
উত্তর- এইরকম জনকজননী জাতীয় প্রশ্নগুলি প্রায়ই বিতর্কের সৃষ্টি করে। রসায়ন থেকে শুরু করে অর্থনীতি- প্রতিটি বিষয়ের জনকের ক্ষেত্রে নানা মুনির নানা মত লক্ষ্য করা গেছে। আসলে এইসব তথ্যের কোনো প্রামাণ্য সর্বজনস্বীকৃত উৎস নেই, পুরোনো গ্রন্থ-পুঁথির উপর নির্ভর করতে হয়। তাই বিভিন্ন লেখকের লেখনীতে দেশ-কাল-জাতি-বর্ণ-ভাষাগত পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক কে? ইন্টারনেটে খোঁজ করলে প্রথমেই উত্তর আসবে হিপ্পোক্রেটস। ৯০ শতাংশ ওয়েবসাইটে গ্রিক পন্ডিত হিপ্পোক্রেটসকে বিশ্বের প্রথম চিকিৎসক বলে স্বীকার করে নিয়েছে। কে এই হিপ্পোক্রেটস? পেরিক্লিসের সমকালীন হিপ্পোক্রেটস (৪৬০খ্রিস্টপূর্ব- ৩৭০ খ্রিস্টপূর্ব) চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। সমকালীন বহু গ্রন্থে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যে সেবাধর্মিতা জড়িয়ে আছে তিনি তা অনুধাবন করেছিলেন। একজন নতুন চিকিৎসক কর্মজীবন শুরুর আগে যে শপথবাক্য পাঠ করতেন তাকে বলা হত “হিপোক্রেটিক ওথ” বা হিপ্পোক্রেটসের শপথবাক্য।
বিশ্বের প্রথম চিকিৎসক হিসেবে অপর যে নামটি উঠে আসবে সেটি হল মিশরীয় পন্ডিত ইমহোটেপ। তিনি একাধারে কবি, দার্শনিক, স্থপতি, ফ্যারাও-এর চ্যান্সেলর এবং একজন বড় মাপের চিকিৎসক। তাঁর সময়কাল হিপ্পোক্রেটসের থেকে বহুযুগ আগে, আনুমানিক ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বব্দে। দুটি প্রাচীন মিশরীয় লিপি থেকে ইমহোটেপের অস্তিত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ নিশ্চিত হতে পেরেছেন এবং বর্তমানে অনেকেই তাঁকে বিশ্বের প্রথমতম চিকিৎসক বলে মেনে নিয়েছেন।
এই শ্রেণীতে তৃতীয় যে নামটি উঠে আসবে তিনি হলেন বিখ্যাত আয়ুর্বেদ শাস্ত্র চরকসংহিতার লেখক চরক (আনুমানিক ষষ্ঠ শতক)। বেশ কিছু বই এবং ওয়েবসাইটে চরককেই বিশ্বের প্রথম চিকিৎসক হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে।
পোস্ট সিরিজ: চাকরির পরীক্ষায় বিতর্কিত জিকে।
পোস্ট সিরিজ: চাকরির পরীক্ষায় বিতর্কিত জিকে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম চিকিৎসক হিসেবে তিনটি নাম উঠে এল- ইমহোটেপ, হিপ্পোক্রেটস এবং চরক। বিতর্কটি বেশ ঘোরালো। এবারে আসি বিতর্ক নিরসন প্রসঙ্গে।
কালের বিচারে ইমহোটেপ প্রাচীনতম, তারপরে চরক এবং সবশেষে হিপ্পোক্রেটস। যদি তিনজন সত্যসত্যই চিকিৎসক ছিলেন তাহলে ইমহোটেপই আমাদের উত্তর হোত। কিন্তু অনেকের মতে ইমহোটেপ কোনো একজন চিকিৎসকের নাম নয় কারণ তাঁর মৃত্যুর ১২০০ বছর পর্যন্ত কোনো রচনায় তাঁকে চিকিৎসক বলে উল্লেখ করা হয়নি। ইমহোটেপ সব থেকে বেশি প্রচারের আলোয় এসেছিলেন তাঁর মৃত্যুর ২৫০০ বছর পরে। এজন্য চিকিৎসক-ইমহোটেপ সম্পর্কে অনেকেই সন্দিহান। বাকি রইল চরক এবং হিপ্পোক্রেটস। এঁদের দুজনের মধ্যে চরকের সময়কাল প্রাচীন, তাই চরককে প্রথম চিকিৎসক বলা যেতে পারে। মহর্ষি চরককে বিশ্বের প্রথম চিকিৎসক বলার আরেকটি যুক্তি হল চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর অবদান। “হিপ্পোক্রেটসের শপথবাক্য” নামে যেটি প্রচলিত সেটিও নাকি তাঁর লেখা নয়; অপরদিকে, মহর্ষি চরক তাঁর বইয়ে রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করে গেছেন। চরকসংহিতা এতখানি জনপ্রিয় ছিল যে সুদূর আরবেও পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর চিকিৎসাপদ্ধতি এবং বর্তমান দিনেও চরকসংহিতা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। হিপ্পোক্রেটসের কালজয়ী অবদান কতটুকু? চরকের যাচ্ছে অন্য সব চিকিৎসক নিষ্প্রভ।
পরিশেষে বলব, ইন্টারনেটের দৌলতে হিপ্পোক্রেটস হয়ে গেছেন বিশ্বের প্রথম চিকিৎসক (Father of Medicine) এবং তর্কের খাতিরে, অনেকটা সান্ত্বনা পুরষ্কারের মতো, চরককে “ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক” আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র
১) প্রথম চিকিৎসক হিপ্পোক্রেটস- http://www.informit.com/articles/article.aspx?p=1567220
২) প্রথম চিকিৎসক ইমহোটেপ- https://www.britannica.com/science/history-of-medicine/Traditional-medicine-and-surgery-in-Asia
৩) প্রথম চিকিৎসক চরক- http://veda.wikidot.com/tip:charaka-samhita
৪) শপথবাক্য হিপ্পোক্রেটসের লেখা নয়- http://theconversation.com/hippocrates-didnt-write-the-oath-so-why-is-he-the-father-of-medicine-32334